প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:১৩
মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব
মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকারের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। স্থানীয় সূত্র ও ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অসাধু জেলেরা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে। এই প্রক্রিয়া শুধু মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং নদীর জীববৈচিত্র্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
|আরো খবর
কারেন্ট জাল ও এর ক্ষতিকর দিক কারেন্ট জাল হলো এক ধরনের সূক্ষ্ম জাল, যা সহজেই পানিতে মাছের চলাচল বাধাগ্রস্ত করে এবং ছোট-বড়ো সব ধরনের মাছ আটকে ফেলে। এর ফলে— ১. প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট : প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট : ছোট মাছ শিকার হয়ে যাওয়ায় প্রজনন চক্র বাধাগ্রস্ত হয়। ২. জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি : কেবল মাছ নয়, অনেক ছোট জলজ প্রাণীও এই জালে আটকে পড়ে মারা যায়। ৩. প্রাকৃতিক ভারসাম্যের বিঘ্ন : নদীর খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। ৪. অর্থনৈতিক প্রভাব : মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় স্থানীয় জেলেদের জীবিকা সংকটে পড়ে। উত্তরণের উপায় : ১. জনসচেতনতা বৃদ্ধি : গ্রাম পর্যায়ে জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। নিষিদ্ধ জালের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। ২. বিকল্প ব্যবস্থা প্রদান : জেলেদের কারেন্ট জালের বিকল্প হিসেবে সহনশীল জাল ব্যবহারের জন্যে উৎসাহিত করা এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা। ৩. আইন প্রয়োগ : কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে কারেন্ট জাল জব্দ ও ধ্বংস করতে হবে। ৪. স্থানীয় সমর্থন : স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা যেতে পারে। প্রশাসনের ভূমিকা : প্রশাসন এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় মৎস্য অফিস এবং নদী রক্ষা টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হলেও পর্যাপ্ত নজরদারি ও স্থানীয় সহযোগিতার অভাবে কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে না।
প্রশাসনের উচিত— ১. নদীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থায়ী নজরদারি ক্যাম্প স্থাপন করা।
২. অভিযানের ফাঁকে ফাঁকে জব্দ করা কারেন্ট জাল প্রকাশ্যে ধ্বংস করা।
৩. জেলেদের পুনর্বাসনের জন্যে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, প্রশাসন আরও কঠোর ব্যবস্থা নিলে এবং স্থানীয় মানুষ সচেতন হলে মেঘনা নদীর এই সংকট দূর করা সম্ভব।
শেষ কথা : নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা শুধু প্রশাসনের দায়িত্ব নয়, এটি স্থানীয় জনগণেরও নৈতিক দায়িত্ব। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।